শিরোনাম:

বীমার পেনিট্রেশনের অবনতিতে বাংলাদেশ

নিজস্ব রিপোর্ট আগস্ট ০৯, ২০২১


দেশে বীমার পেনিট্রেশনের অবনতি ঘটেলো। এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এসে দেশের বীমা খাতের পেনিট্রেশন দাঁড়িয়েছে ০.৪০ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালে পেনিট্রেশনের এই হার ছিল ০.৪৯ শতাংশ। বিশ্বের বীমা বাজার নিয়ে সুইস-রি’ সর্বশেষ সিগমা রিপোর্টে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইন্স্যুরেন্স: দি রিকভারি গেইনস পেস’ নামে ১৪ জুলাই ২০২১ এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্বের ১৪৭টি দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয় এই রিপোর্টের জন্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে প্রিমিয়াম আয়ের দিক থেকে বৃহৎ ৮৮টি দেশের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সিগমা রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্ব বীমা খাতে পেনিট্রেশনে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬। আগের বছরে দেশের এই র্যাং কিং ছিল ৮৫। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান ৩৮; দেশটির পেনিট্রশনের হার ৪.২, যা আগের বছরে ছিল ৩.৭৬ শতাংশ।

এশিয়ার সর্বাগ্রে রয়েছে হংকং; যার পেনিট্রেশনের হার ২০.৮ শতাংশ। জিডিপি তথা মোট দেশজ উৎপাদনে বীমা খাতের অবদান হিসাব করে এই পেনিট্রেশনের হার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে দেশের লাইফ বীমার পেনিট্রেশন ০.৩ শতাংশ; যা আগের বছরে ছিল ০.৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে নন-লাইফ বীমার পেনিট্রেশন ০.১ শতাংশ; যা আগের বছরে ছিল ০.১৫ শতাংশ।

সুইস-রি’র তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল ১ হাজার ৩৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে হিসাবে গেলো বছর বাংলাদেশের প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪.২ শতাংশ। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারী বেসরকারী ৮১টি বীমা কোম্পানী ব্যবসা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে লাইফ বীমা কোম্পানীর সংখ্যা ৩৫টি, যার মধ্যে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। অন্যদিকে দেশের নন-লাইফ বীমা কেম্পানীর সংখ্যা সর্বমোট ৪৬টি, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে একটি।

মোঃ শাহ আলম

বীমার পেনিট্রেশনের অবনতি প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপ-সচিব)মোঃ শাহ আলম ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলা’কে বলেন বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারনে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এতে মানুষের সঞ্চয় কমেছে ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও সঞ্চয় কমে যাওয়ায় মানুষ বীমার নিয়মিত প্রিমিয়াম দিতে পারছেনা এবং নতুন করে পলিসি    গ্রহণে অনাগ্রহী হচ্ছে। তাছাড়া করোনার কারনে বীমা কর্মীরা মানুষের কাছাকাছি যেতে পারছেনা, বীমার সুবিধা সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে পারছেনা। এতেও নতুন বীমা পলিসির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। কিছু কিছু কোম্পানী সময়মত মেয়াদোত্তীর্ণ বীমা পলিসির টাকা গ্রাহককে দিতে পারছেনা। ফলে মানুষের মাঝে বীমার প্রতি একধরণের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া করোনাকালীন এই সময়ে সময়মত দাবী পরিশোধ হচ্ছেনা। এতেও বীমা পলিসি হ্রাস পাচ্ছে।

মোঃ কাজিম উদ্দিন

বাংলাদেশে বীমার পেনিট্রেশন এক ধাপ পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কাজিম উদ্দিন ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলা’কে জানান বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মহামারী করোনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে, বিশেষ করে করোনা আগ্রাসনে বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ লোক দরিদ্র হয়েছে। যেখানে মানুষ জীবন নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বীমা পলিসি গ্রহণ কিংবা বীমার মাধ্যেমে সঞ্চয় করার চিন্তা দূরূহ ব্যাপার। সমাজের উচ্চবিত্তরা বীমা পলিসি গ্রহণে তেমন আগ্রহী নন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বীমার মাধ্যেমে সঞ্চয় করে থাকেন। আর মহামারী করোনায় এ নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। করোনায় তারা কর্মহীন ও সঞ্চয়হীন হওয়ার ফলে দেশে বীমা গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে।