শিরোনাম:

একান্ত সাক্ষাৎকারে এনএলআই সিইও মোঃ কাজিম উদ্দিন

করোনার বিপর্যয় কেটে বীমা খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে

তানভীর আহমেদ আগস্ট ০৯, ২০২১


মো. কাজিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। উদিয়মান এ বীমা ব্যক্তিত্ব ১৯৮৭ সালে ন্যাশনাল লাইফের এন্ট্রি লেভেলে যোগদানের মাধ্যমে বীমা পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন এবং সর্বশেষ ২০১৪ সাল থেকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদসহ সুদীর্ঘ ৩৩ বছর ন্যাশনাল লাইফের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সফলতার সাথে সকল ধাপ ও সিঁড়ি অতিক্রম করে ২২ জুন ২০২০ থেকে তিনি কোম্পানীর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে অধিষ্ঠিত। মহামারী করোনার এই দুঃসময়ে বীমা দাবী পরিশোধ, বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলা’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইনস্যুরেন্স নিউজ বাংলার নির্বাহী সম্পাদক তানভীর আহমেদ।

আইএনবিঃ করোনার এই দুঃসময়ে কিভাবে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করছেন?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ মহামরী করোনায় বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি থমকে গেছে। ভয় আতংকের মাঝে মানুষের জীবন নির্বাহ হচ্ছে, স্থবির হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। করোনার প্রথম ঢেউ শুরু অর্থাৎ মার্চ ২০২০ থেকে আজ অবধি সরকারী সাধারণ ছুটি, লকডাউন ও বিভিন্ন ছুটির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। বিশ্বে এ পর্যন্ত ৪৩,১২,০৮৮ জনের প্রাণহানী ঘটেছে, কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ফিরে আসেনি স্বাভাবিক জীবন। এ অবস্থায় বীমা ব্যবসা পরিচালনা দূরূহ ব্যাপার। তবুও মহান আল্লাহ অশেষ রহমতে আমরা থেমে নেই। সকল ভয় ভিতি উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা আমাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রতিটি মূহুর্তে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। এতে ২০২০ সালে ব্যবসায়ীক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়েছি। সাফল্যের এ ধারা ২০২১ সালেও অব্যাহত রয়েছে।    

আইএনবিঃ করোনাকালে গ্রাহকদের দাবী পরিশোধের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ আমি মনে করি যে কোম্পানী তার গ্রাহকদের দাবী সময়মতো পরিশোধ করতে পারবে তারাই ব্যবসা এগিয়ে নিতে পারবে। এ জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরই করোনার কঠিন সময়ের মধ্যেও দাবী পরিশোধের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ২০২০ সালে করোনার প্রথম দিকে যখন একাধারে চার মাস অফিস বন্ধ ছিল তখন তেমন দাবী পরিশোধ করা হয়নি। দায়িত্ব নিয়েই আমি কর্মকর্তা-কর্মীদের প্রতিটি পর্যায়ে বীমা দাবীর চেক পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছি এবং সার্বক্ষণিক কাজ করেছি। সে ধারা ২০২১ সালেও অনুরূপভাবে অব্যাহত আছে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে যেখানে আমাদের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়েছিল ৩১৭ কোটি টাকা, ২০২০ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয় ৩৪২ কোটি টাকা।

আইএনবিঃ ২০২০ সালে কত টাকা দাবী পরিশোধ করেছেন এবং ২০২১ সালে কত টাকা দাবী পরিশোধের প্রস্তুতি রয়েছে?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ করোনার মধ্যেও আমরা পূর্ব নির্ধারিত সকল প্রকার দাবী যথাযথভাবে পরিশোধ করেছি। আমরা ২০২০ সালে সর্বমোট দাবী পরিশোধ করি ৭৯৯ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা দাবী পরিশোধের প্রস্তুতি নিয়েছি।

আইএনবিঃ ১ মার্চ কে কেন জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করা হলো; এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ বীমা শিল্পের সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত। রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় সারা দেশে কর্মীদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বীমা পেশাকে বেছে নেন এবং ১৯৬০ সালের ১ মার্চ আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধুর বীমা পেশার যোগদান তারিখ ১ মার্চ’কে স্মরণীয় করে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ ও নির্দেশনায় জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম বীমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা বীমা পেশায় কাজ করার কারণে আমি বীমা পরিবারের একজন গর্বিত সন্তান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে বীমা দিবস পালিত হচ্ছে এবং গত দুই বছর সকল বীমা কোম্পানীর কর্মীরা সারা দেশে জেলা ও থানাভিত্তিক প্রশাসনের সঙ্গে নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করে। আমি মনে করি রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় বীমা দিবস পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে বীমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে এবং মানুষ বীমার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

আইএনবিঃ বীমা খাতে কি কি সমস্য রয়েছে বলে আপনি মনে করনে?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ স্বাভাবিকভাবে বলতে হয় দেশে বীমা খাতে বিশেষ করে জীবন বীমার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। প্রথমত জীবন বীমার প্রতি জনসচেতনতার অভাবকেই আমি প্রাধান্য দিবো। দ্বিতীয়ত আমাদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। পরবর্তীতে বলতে হয় কোম্পানীগুলোতে অসম প্রতিযোগীতা, বিলম্বে বীমা দাবী পরিশোধ ও বীমা কর্মীদের পেশাদারিত্বের ঘাটতি এসব সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। তবে সমস্যাগুলো ক্রমেই নিরসন হতে চলছে। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএ এর কঠোর পর্যবেক্ষণ ও পদক্ষেপের ফলে অনেক সমস্যাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগে এক কোম্পানীর বীমা কর্মী অন্য কোম্পানীতে নবায়ন প্রিমিয়াম নিয়ে চলে যেতো। আইডিআরএ এর হস্তক্ষেপের ফলে বীমা কর্মীদের এই চলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। আইডিআরএ এর উদ্যোগে বীমা কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে, যথাসময়ে বীমা দাবী পরিশোধ করা হয়ে এক্ষেত্রে আর সমস্যা থাকবেনা বলে আমি মনে করি।

আইএনবিঃ করোনা পরবর্তী বীমা খাত নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

মোঃ কাজিম উদ্দিনঃ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহান আল্লাহ নিকট থেকে প্রদত্ত এবং আল্লাহ নিজেই তার বান্দাদের জন্য তা নিরসন করেন। আশা করি মহামারী করোনাও একদিন বিশ্ব থেকে বিদায় নেবে। বিশ্ব আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে, মুখরিত হয়ে উঠবে জনপদ, সবাই কর্মে ফিরবে। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশও আগের অবস্থানে ফিরে আসবে, অর্থনীতির সকল সূচকে এগিয়ে যাবে। ঘুরে দাঁড়াবে বীমা খাত, কর্মীরা নবউদ্যোমে কাজ শুরু করবে। বীমার মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত জীবন গড়তে মানুষ উদ্যোগী হবে। তাছাড়া জাতীয় বীমা দিবসে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে প্রচার প্রচারণা হয় তা কাজে লাগিয়ে আগামীতে বীমা খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে।